আন্দোলনের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

মুন্সীগঞ্জ থেকে

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জনগণের ছাত্র এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তেমন আস্থা নেই। বাংলাদেশের এত মানুষ আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন তা শোধ করার সময় এসেছে।

আন্দোলনের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
আন্দোলনের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় ও ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদী সরকারকে অপসারণের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, তারা কি সফল হয়েছে? বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঈদের পর বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের চেষ্টা করলেও পারেনি।

সরজিস আলম বলেন, আন্দোলনের সময় আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আপনারাও ঐক্যবদ্ধ থাকুন। সরকার গত ১৬ বছরে যেভাবে আমাদের বোনদের উপর অত্যাচার করেছে, আমাদের ভাইদের উপর গুলি করেছে, রাস্তায় পশুর মত মানুষ হত্যা করেছে, ট্রাকে করে ময়লা ফেলে আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে, সেই নথিগুলো আপনাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

 একটা কথা মনে রাখবেন, সেই ফ্যাসিবাদী সরকার চাইবে আপনি আপনার নীতি-নৈতিকতা ভুলে যান। তাদের ভুলে গেলে তারা আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, যারা আগামীতে শাসনে আসবে, যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে চায়, যারা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেই বৈষম্য আন্দোলনের স্মৃতি মুছে দিতে চাইবে। আপনার কাজ হবে আপনার, আপনার পরিবারের, এমনকি একটি নথির মাধ্যমে কী ঘটেছে তা রেকর্ড করা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাবা-মা সারাজীবন স্বপ্ন দেখিয়ে আসছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এই সমাজে যে পেশার মর্যাদা আছে তাদের হতে হবে। আমাদের বাবা-মা বা আমাদের অভিভাবক কেউই স্বপ্ন দেখেননি যে আমরা ভালো রাজনীতিবিদ হব। আপনি বাংলাদেশ থেকে যা করেছেন, আপনি যে দায়িত্ব পালন করছেন, সংবিধানে যে নীতিমালা আছে, যে নীতিমালা আপনি অনুসরণ করেন তা সেই জাতীয় সংসদ দ্বারা নির্ধারিত হয়। ওই জাতীয় সংসদে যারা বসেন তারা রাজনীতিবিদ।

 সেই রাজনীতির জায়গায় যদি ভালো মানুষ না যায়, তাহলে বাংলাদেশে যেখানেই যাবেন সেই খারাপ লোকদের দ্বারা শাসিত হবে। সেই জায়গা থেকে দেশ ভালোভাবে চালাতে চাইলে রাজনীতি করতে হবে নয়তো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে। দিনশেষে রাজনীতির বাইরে কিছু নেই।

ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখন দেখেছি এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বারবার। আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী যারাই ছিলেন, যারাই এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা সবাই বিশ্বের গণ-অভ্যুত্থানের নানা বিষয়ের কথা পড়েছেন, তখন জানতেন কিভাবে আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক করতে হবে। নিপীড়ন, অত্যাচার, অত্যাচার আমাদের নড়তে পারেনি।

আমার সামনে যারা বসে আছেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করছি, সময়ের প্রয়োজনে রাস্তায় নামবেন, প্রয়োজনে ইট নিক্ষেপ করবেন, প্রয়োজনে রাজপথে নেতৃত্ব দেবেন, তবে এটাও মনে রাখবেন প্রত্যেকের মূল কাজ। ছাত্র হিসেবে আমাদের শিক্ষা আমাদের শিক্ষা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধান ১৯৭২ সালে লেখা হয়েছিল, এই সংবিধানে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা এই মুহূর্তে এই রাষ্ট্রের কাঠামোর সঙ্গে যায় না। শেখ হাসিনা বিগত দিনে স্বচ্ছ নির্বাচন দেননি। এই সংবিধানে একটি বিধান ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা পরপর তিনটি নির্বাচন দেখেছি যা দেশের মানুষের সঙ্গে, রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের বিদ্যমান ধারাগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকারকে যে কাজটি করতে হবে তা স্পষ্ট করার জন্য সংবিধানটি নতুন করে তৈরি করা উচিত।

আরও পড়ুন:৮ বছর পর ভুটানের কাছে হারল বাংলাদেশ

সারগিস আলম বলেন, তারা আপনাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করবে। একটা কথা বলি, ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই বাংলাদেশে কেউ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চালু করতে পারবে না।

আরও বক্তব্য রাখেন সমন্বয়কারী আব্দুল তৌসিফ রোহান, ইব্রাহিম নিরব, সামিয়া মাসুদ ম্যাম, আবদুল্লাহ সালেহীন অয়ন, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান মৃধা, শ্যামলী সুলতানা জেদনী প্রমুখ।

এর আগে বিভাগীয় ও জেলা সফরের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী সরজিস আলমের নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৪ সদস্যের একটি দল আজ সকালে মুন্সীগঞ্জে আসে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় তিনি আন্দোলন কর্মসূচিতে নিহত ছয়জনের পরিবারের সদস্য ও আন্দোলন কর্মসূচিতে আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত তিনজনের মধ্যে শোক প্রকাশ করেন। পরে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় শেষে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে মতবিনিময় করেন।

প্রসঙ্গত, মুন্সীগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় কাজী মতিনের ছেলে রিয়াজুল ফরাজী, আলী আকবরের ছেলে মোহাম্মদ সজল ও সিরাজ সরদারের ছেলে নূর মোহাম্মদ ডিপজলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আহত হয়েছেন পঞ্চাশের বেশি মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.