পরিবার পরিকল্পনা থেকে ‌‘সাধারণ ক্যাডার’ বিলুপ্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা (সাধারণ) ক্যাডার বিলুপ্ত করে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা কারিগরি ক্যাডারের (মেডিকেল) অধীনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক-কর্মকর্তারা।

পরিবার পরিকল্পনা থেকে ‌‘সাধারণ ক্যাডার’ বিলুপ্তির দাবি
পরিবার পরিকল্পনা থেকে ‌‘সাধারণ ক্যাডার’ বিলুপ্তির দাবি
তাদের দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে মেডিক্যাল টেকনিক্যাল চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে সাত দফা সুপারিশও দিয়েছেন তারা।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে 'পরিবার পরিকল্পনা সরকারি চিকিৎসক সমিতি, বাংলাদেশ' আয়োজিত মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের (সিসিএসডিপি ইউনিট) সহকারী পরিচালক ড. মোঃ সোহেলে হাবিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭৫ সাল থেকে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য (এমসিএইচ) কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে ১১২০টি পদের বিপরীতে ডাক্তারদের পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে নন-ক্লিনিক্যাল অফিসারদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়। যিনি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র হাসপাতালের ওষুধ বিতরণ ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ছিলেন।

সোহলে হাবিব বলেন, যেহেতু বিভাগের পুরো কার্যক্রম ক্লিনিক্যাল, তাই তারা মাঠ পর্যায়ে এমসিএইচ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্বল্পমেয়াদী ডায়েট পিল, ইনজেকশন, দীর্ঘমেয়াদী অস্থায়ী পদ্ধতি ইমপ্লান্ট, আইইউডি এবং স্থায়ী পদ্ধতিতে বিশেষীকরণ: পুরুষ এবং মহিলা নির্বীজন পরিষেবা এবং পরিষেবা পরবর্তী সমস্ত জটিলতার চিকিত্সা। এছাড়া ১০ ও ২০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জরুরি ডেলিভারি সেবা এবং রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালে সব ধরনের মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা এই মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৮ সালে কৌশলগতভাবে একটি পৃথক বিভাগ গঠন করে পরিবার পরিকল্পনার জন্য ৬০৩ ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যমান মেডিকেল অফিসারের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পরে মামলার মাধ্যমে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত 'বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ফ্যামিলি প্ল্যানিং) ফরমেশন অ্যান্ড ক্যাডার অর্ডার ২০২০'-এর আলোকে চিকিৎসকদের প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু নন-ক্লিনিক্যাল অফিসাররা (জেলা, বিভাগ ও অধিদপ্তর) পর্যায়ে মেডিকেল অফিসারদের যাবতীয় কার্যক্রম (বদলি, এসিআর, পরিকল্পনা) করছেন। ফলে মাঠপর্যায়ে সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

এ সময় বক্তারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান ১১২০টি পদের বিপরীতে পরিচালক পদ মাত্র ২ (০.০১৭%), উপ-পরিচালক পদ মাত্র ২ (০.০১৭%), সহকারী পরিচালক পদ ৫৫ (৪.৯১%)। ), মেডিকেল অফিসার হল ১০৬১. (৯৪.৭৩%), যা একটি সুসংগঠিত ক্যাডার তৈরিতে বাধা দেয়। বিদ্যমান ক্যাডারে একজন ক্যাডার কর্মকর্তার প্রায় পুরো মেয়াদ একটি পদে সম্পন্ন হয়। মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসকরা সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কিন্তু কোনো পদোন্নতি হচ্ছে না।

তারা আরও বলেন, সকল (টেকনিক্যাল) চিকিৎসক তাদের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত পদে চাকরি শুরু করেন এবং একই পদ থেকে অবসর নেন। অন্যদিকে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা (সাধারণ) ক্যাডারের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা অধিদপ্তরের বিভাগীয়, জেলা পর্যায়ে সব পদে পদোন্নতি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন কারিগরি বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা। কিন্তু এখন সময় এসেছে নির্যাতিত মেডিকেল অফিসারদের ন্যায্য দাবি পূরণ ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বৈষম্য ছাড়াই বিভাগ পুনর্গঠনের।

আরও পড়ুন:আন্দোলনের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

এ সময় বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার চিকিৎসা কর্মকর্তারা ৭ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো, মেডিকেল অফিসারদের মহাপরিচালক থেকে প্রশাসনিক পদে পদোন্নতি দিতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা (সাধারণ) ক্যাডার বিলুপ্ত/অন্য ক্যাডারে একীভূত করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব মেডিকেল অফিসারদের 'গ্রেডেশন লিস্ট' প্রকাশ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে ক্যাডার সংখ্যা বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে

। 'নন-ক্যাডার' পদে যোগদানকারী মেডিকেল অফিসারদের জন্য২০২৩'এনক্যাডরমেন্ট এন্ট্রি'র জন্য গেজেট করা হবে এবং প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। আয়ন বিনিময়ের (ডিডিওশিপ) জন্য শুধুমাত্র ডাক্তাররা সেখানে থাকবেন। যেহেতু বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) কারিগরি (মেডিকেল) ক্যাডার সম্পূর্ণ আলাদা ক্যাডার। তাই এই ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত সকল কর্মকর্তার সকল নথিপত্র, বেতন ভাতা, এসিআর সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.