আ.লীগের আমলে গুম-নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিখোঁজ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশ নিখোঁজ ব্যক্তিরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়।

আ.লীগের আমলে গুম-নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
আ.লীগের আমলে গুম-নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিখোঁজ পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক ও লেক্সাস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর র‌্যাব-১ আমাকে আটক করে। তারা আমাকে এক মাস ১০ দিন নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মানুষ এভাবে নির্যাতন করতে পারে না।

আমি সেখানে ছিলাম পুরো সময়, আমি কান্নাকাটি শুনেছি। এবং মাঝে মাঝে পোকামাকড়ের গুঞ্জন ছাড়া আর কোন শব্দ ছিল না। ছোট ছোট ঘর আছে। বাইরের কোনো শব্দ ছিল না। তাদের অত্যাচারের প্রভাবে সবাই শুধু ‘মা বাবা’ বলে চিৎকার করছিল। অনেক শর্ত দিয়ে কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। গেজেটে ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ১৫ দিন পরও তারা কোথায় বসবে, কীভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, যেখানে জল্লাদের আয়না তৈরি হয়, সেখানে বাংলাদেশে কত আয়না আছে? সেটা আমরা জানতাম না। বাংলাদেশে কারাগার থাকলে বিচার বিভাগ, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার দরকার নেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব কারাগার চালু না হলে সন্দেহভাজন সব কারাগারে ডিজিএফআই ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে কর্ডন কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর সব কারাগার ভেঙে ফেলা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গুম, খুন ও অপহরণের ৭০-৮০ শতাংশই হয়েছে র‌্যাবের হাতে। ক্রসফায়ারের নামে নাটক করে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। 2010 থেকে 2024 সাল পর্যন্ত র‌্যাবের দায়িত্বে থাকা ডিজি, অতিরিক্ত ডিজি, ডিবি প্রধান এবং ডিজিএফআই প্রধানকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:৫০ কোটি ডলার বকেয়া, বাংলাদেশের সরকারকে তাগাদা আদানিগোষ্ঠীর

মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, মেজর (অব.) সাজ্জাদ আহমেদ র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। আমরা প্রতিটি উৎসের বিচার চাই। র‌্যাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন বাহিনী গঠন করতে হবে। বাংলার মানুষ র‌্যাবকে দেখতে চায় না। তারা বিশ্বে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে পরিচিত।

ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বিল্লাল বলেন, ছাত্র ভাই-বোনেরা বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু এখনও 20 শতাংশ সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে বাকি আছে। আশা করি, ছাত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাকি ২০ শতাংশ আবার স্বাধীন হবে।

প্রত্যেক নিখোঁজ অপহরণকারীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। পরের আত্মীয় বা প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মাসিক ভাতা চালু করতে হবে। গুম, খুন, অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নিখোঁজ হওয়া অর্ধশতাধিক পরিবারের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.