যে তিন কারণে দেশে বিদ্যুৎ সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় দিন ও রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। তবে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি।
যে তিন কারণে দেশে বিদ্যুৎ সংকট |
বর্তমানে দেশে উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম।
শেখ হাসিনা সরকার গত পনের বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করেই অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয় না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে এ খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করা সম্ভব না হলেও সরবরাহ বজায় রাখতে যতটা টাকা দিতে হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান জানান, সাময়িক সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে।
এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ডলার সংকট। এর উপর ভিত্তি করে, এই মুহূর্তে অন্যান্য সমস্যাগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
একই সঙ্গে বিগত সরকারের অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।
ডলার সংকট
দেশে বেশির ভাগ বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় বারো হাজার মেগাওয়াট। এর আগে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। কিন্তু এখন ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ খাতে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এখন ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিডিবি।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ২৭ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। তবে আশার খবর হলো সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ ক্ষমতা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৬ কোটি ঘনফুট।
অন্যদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানির পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন ১৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় তারা এখন এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা
শক্তির জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীলতা
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতের সবচেয়ে খারাপ নীতিগত ভুল হলো শক্তিশালী অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আমদানি নির্ভর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতির ত্রুটিপূর্ণ ধারণার ভিত্তিতে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে।
এই জ্বালানির বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর আগে সরকার নিজেই প্রাথমিক জ্বালানি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বা এটি বিকল্প জ্বালানী হিসাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলিতে ফোকাস করেনি।
আরও পড়ুন:প্রিয়নবী সা. রাস্তায় হাঁটতেন যেভাবে
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানির এই আমদানি নির্ভরতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। যা সরাসরি ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং সরবরাহ লাইনের অভাব
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এ খাতকে চরম অব্যবস্থাপনার খাত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দ্রুত বৃদ্ধি আইন পাস করে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ আইনে টেন্ডার ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতারাও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা নিয়েছেন।
অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও সেগুলো আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ টাকার অভাবে গ্যাস ও তেল কেনা যাচ্ছে না। এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি স্থগিত বা নবায়ন করা হয়নি।
দেশের দক্ষিণে চারটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো পায়রা, রামপাল, এস আলম ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
Post a Comment