আমিরাত থেকে দেশে ফিরলেন ১২ জন /‘মনে হলো নতুন জীবন পেয়েছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য ৫৭ বাংলাদেশীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছান।

আমিরাত থেকে দেশে ফিরলেন ১২ জন
আমিরাত থেকে দেশে ফিরলেন ১২ জন 
নতুন জীবন নিয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন, মেহেদী হাসান রিপন, জহিরুল ইসলাম নাহিদ, মেহরাজ উদ্দিন রাসেল, মোহাম্মদ হারুন, শাহজাহান, মোহাম্মদ সবুজ ও সাইদুল হক। তাদের অধিকাংশ বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারীতে।

চট্টগ্রামের রাউজানের মধ্যম কদলপুর এলাকার মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন জানান, চোখের পলকে সব ভুল হয়ে যায়। দেশে গণহত্যার প্রতিবাদে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আবুধাবি পুলিশ গ্রেফতার করে কাউকে জীবন দিয়েছে, কাউকে জেল দিয়েছে। কারাগারে আমি শুধু কেঁদেছি, প্রার্থনা করেছি এবং উপবাস করেছি। একবার ভাত দিতেন। দুই বেলা রুটি। একটি ঘরে ৩০ জন মানুষ থাকতেন। এভাবেই কেটে যায় ৪৯ দিনের অনিশ্চিত জীবন।

তিনি বলেন, মুক্তির খবর যেদিন শুনলাম সেদিন মনে হয়েছিল নতুন জীবন পেলাম। কিন্তু জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরলেও সব তছনছ হয়ে গেছে। কিছু আনতে পারলাম না। আমি আর কখনো যেতে পারব না। বাকি জীবন কিভাবে কাটাবেন? মাথায় ঋণের বোঝা।

তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন সবার ছোট। বাবা শামসুল হুদা ছোট চাকরি করেন। বড় দুই ভাই বেকার। মা রশিদা বেগম একজন গৃহিণী। ছেলের দেশে ফেরার খবর পেয়ে শনিবার রাতে বিমানবন্দরে ছুটে যান রাশিদা। কাউচারের ছোট মেয়েও তার সঙ্গে আসে। ছেলেকে পেয়ে কাঁদতে থাকে রাশিদা।

তিনি বললেন, শুনেছি, আমার ছেলে জেলে; তারপর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। সরকার উদ্যোগ না নিলে হয়তো আমার ছেলেকে দেখতে পেতাম না। এ জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

তবে ছেলেকে আমিরাত থেকে বিতাড়িত করায় এখন সংসার চলবে কী করে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি রাশিদা বেগম।

ফেরত আসাদের একজন মেহেদি হাসান রিপন বলেন, আমিরাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ২৫ বছরের কারাদণ্ড। সাজা মওকুফ না হলে হয়তো বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতেন তিনি। কিছু আনতে পারলাম না। আমি শুধু জীবন নিয়ে এসেছি।

আরও পড়ুন:রোনালদোর আরেকটি গোল, আরও এক বিশ্ব রেকর্ড

মোহাম্মদ হারুন বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিচিতদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে আমরা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু পুলিশ যে এতটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা জানা ছিল না।

তাদের সাজা মওকুফের উদ্যোগ নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান সাইদুল হক। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম সাজা কার্যকরের আগে মুক্তি পাওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় আমি মুক্তি পেয়েছি। চাকরি গেলেও অন্তত পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারব। আমাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আরও অনেকে এখনও সেখানে বন্দি রয়েছেন। সরকারকেও তাদের মুক্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.