অস্বাভাবিক লোডশেডিং /রংপুর বিভাগে দিনে-রাতে বিদ্যুৎ মিলছে ৮ ঘণ্টারও কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

একদিকে মৃদু দহন অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া অসহনীয় লোডশেডিং। শুধু দু-একদিন নয়, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে রংপুর বিভাগে। শহরে ২৪ ঘন্টায় ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও গ্রামে গ্রাহকরা দিনরাত ৬-৮ ঘন্টার কম বিদ্যুৎ পরিষেবা পাচ্ছেন। বাকি সময় জনজীবন অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের জন্য হাঁপাচ্ছে।

অস্বাভাবিক লোডশেডিং /রংপুর বিভাগে দিনে-রাতে বিদ্যুৎ মিলছে ৮ ঘণ্টারও কম
অস্বাভাবিক লোডশেডিং /রংপুর বিভাগে দিনে-রাতে বিদ্যুৎ মিলছে ৮ ঘণ্টারও কম

রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার শহর-বন্দর, বাজার-বাজার ও গ্রামে বিদ্যুতের জন্য হাঁপাচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলমান এই লোডশেডিংয়ে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ ও ২ নম্বর গ্রাহকসহ রংপুর বিভাগের প্রায় ১ কোটি গ্রাহকের দুর্ভোগ চরমে।

এদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টির পর ভাদ্রের ক্রান্তিলগঞ্জে মৃদু দাবানল চলছে। এ অবস্থায় তাপপ্রবাহের চাপে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে অস্বস্তি বেড়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা বৃদ্ধ ও শিশুদের। মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশি ও অসুস্থতা বাড়ছে। তারা যত দ্রুত সম্ভব লোডশেডিং বন্ধসহ সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাধারণ মানুষসহ সচেতন মহল বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে, যা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু জীবন দুর্বিষহই নয়, এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ছোট-বড় কারখানা ও ব্যবসায়। লোডশেডিংসহ প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছে পুরো বিভাগ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ছোট-বড় শতাধিক শিল্প-কারখানা স্থবির হয়ে পড়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বিলাসবহুল শপিংমল, বিপানি বিতানসহ ছোট-বড় বাজারে বিক্রির মন্দা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ, লোডশেডিংয়ের কারণে কখনও কখনও তা এক থেকে দেড় বা দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। লাগাতার লোডশেডিংয়ের কারণে হিট স্ট্রোকের প্রকোপও বাড়ছে। গত কয়েকদিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই আবহাওয়া পরিবর্তনের জ্বর, ঠান্ডা এবং হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুত সমিতি গ্রাহকদের কাছ থেকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী বিল আদায় করছে। মিটার ভাড়া ও চাহিদার চার্জ নেওয়া, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কিন্তু সেবার মান নেই। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এতে গ্রাহকরা নানা সমস্যায় পড়েছেন। গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে লাগাতার লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকের ফ্রিজ, টিভিসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি সোসাইটিতে গড়ে ৫ থেকে ৭ লাখ গ্রাহক এবং ৮ থেকে ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে। প্রতিটি সমাজে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ৭০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। কিন্তু সমিতিগুলো চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ঘাটতি রয়ে গেছে ৩০-৪০ মেগাওয়াট। একই অবস্থা রংপুরসহ আট জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গ্রাহক পীরগাছা উপজেলার কান্দি বাজার এলাকার আমিনুল ইসলাম জুয়েল জানান, একদিকে গরম অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের ঘনঘন আসা-যাওয়া। প্রতিদিন রাত ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে না। এতে আমরা গর্বিত। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

রংপুর নগরীর নাজিরেরহাট এলাকার গ্রাহক জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন ১০-১২ বার লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:আবু সাঈদ হত্যা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যকে পিবিআইতে হস্তান্তর

নগরীর হাজীপাড়া শাপলা চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শুধু বিদ্যুতের উন্নয়নের কথা শুনেছি। এখন হাসিনার পতনের পর বাস্তবে তা দেখছি। গত ১০-১২ বছরে এভাবে আর কখনো বিদ্যুৎ চলেনি। কখন বিদ্যুৎ চলে যাবে আর কখন ফিরে আসবে বলা মুশকিল। প্রচন্ড তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ে শেষ হয়ে গেল জীবন। দোকানে বসে থাকা যায় না। অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসার অবস্থাও বেহাল।

একই আক্ষেপ রংপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী অমিত হাসানেরও। তিনি বলেন, লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। একটি জেনারেটর কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে? আগের মতো কাজও করতে পারছি না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে।

রংপুর সদরের পাগলাপীর বাজার এলাকার মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ বিহীন। একদিনের পরিস্থিতি

No comments

Powered by Blogger.